দেশের শতকরা ৬৫ ভাগ তরুণ জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে পরিণত করতে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর অ’পরিহার্য। শিক্ষার জন্য দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে সরকার বদ্ধপরিকর। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্লা’শ ডিজিটাল করার বিকল্প নেই।
ইতোমধ্যে ৫শত ৮৭টি প্রতিষ্ঠানে ফ্রিওয়াইফাই জোন বাস্তবায়ন হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফ্রিওয়াইফাই জোন সৃষ্টির পাশাপাশি বিটিসিএল এবং টেলিট’কের প্রযু’ক্তি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। হাওর, দ্বীপ কিংবা চরাঞ্চলসহ দেশের যে কোন দুর্গম এলাকা ডিজিটাল সংযু’ক্তি থেকে বাদ যাবে না।
বুধবার (১ জুলাই) নেত্রকোণায়, নেত্রকোণা জে’লা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত মুজিববর্ষ, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও সেবার মানোন্নয়ন শীর্ষক“ অনুষ্ঠানে জুম কনফারেন্সিংয়ে প্রধান অ’তিথির বক্তৃতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আগামী দিনে ডিজিটাল প্রযু’ক্তি ছাড়া জীবনযাপন অকল্পনীয়। আগামী দিনের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রত্যেককেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ জানতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রযু’ক্তি গ্রহণের জন্য কেবল আগ্রহ থাকলেই যে কারো পক্ষে প্রযু’ক্তি আয়ত্ব করা সম্ভব।
তিনি বলেন, প্রযু’ক্তিতে শতশত বছর পিছিয়ে থেকে নাঙ্গঁল জোয়ালের দেশ থেকে বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল প্রযু’ক্তিতে বৈশ্বিক নেতৃত্বের জায়গায় পৌঁছেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন এবং ইউপিইউ এর সদস্য পদ অর্জন এবং ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে ডিজিটাল প্রযু’ক্তি বিকাশের বীজ বপণ করে গেছেন। ১৯৯৬ সালে তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর পঁচাত্তর পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছরের পশ্চাৎপদতার জঞ্জাল অ’পসারণ করে ডিজিটাল প্রযু’ক্তি বিকাশে যুগান্তকারী কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো কম্পিউটারের ওপর থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহারের মাধ্যমে কম্পিউটার সাধারণের নাগালে পৌঁছে দেওয়া, মোবাইল ফোন সাধারণের নাগালে পোঁছে দিতে চারটি কোম্পানিকে মোবাইল ফোন পরিচালনায় সম্পৃক্ত করা এবং মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের উদ্যোগ গ্রহণ উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতার পালা পরিবর্তনের পর প্রযু’ক্তি বিকাশের এই উদ্যোগ আবারও স্হবির হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি ঘোষণা এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ ১১ বছরে এই কর্মসূচি বিশ্ব মানচিত্রে বদলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। রচনা করেছে সমৃদ্ধির সোপান।
বাংলাদেশ বিশ্বে অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে করোনাকালে মনে হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ না থাকলে জীবনযাত্রা সচল থাকতো না। এটি এখন শ্বা’স প্রশ্বা’সের মতোই অ’পরিহার্য। অফিস হচ্ছে এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের মন্ত্রণালয়ের দশটি প্রতিষ্ঠানে অন লাইনে তদারকি করতে পারছি। সবাই করছে। আমাদের ছে’লেরা এ্যাপ তৈরি করছে। মোট কথা আম’রা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্বের জায়গায় উপনীত হয়েছি। বিদেশীরাও আমাদের কাছে প্রযু’ক্তি চাচ্ছে, আমাদের অনুসরণ করছে। বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো সবার হাতে প্রযু’ক্তি পৌঁছানো। আম’রা ইতোমধ্যে সে কাজটিও সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যেই ২০২১ সালে ৫জি প্রযু’ক্তি দুনিয়ায় যাত্রা শুরু করার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে দ্রুত গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
নেত্রকোণা জে’লা প্রশাসক মঈনউল ইস’লামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান শেফা’লি, পু’লিশ সুপার মো: আকবর আলী, নেত্রকোণা প্রেসক্লাব সভাপতি এবং জে’লার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক প্রতিনিধিগণ বক্তৃতা করেন।