জিয়াউর রহমান চৌধুরী ও আয়েশা আলম প্রান্তি
ডা: সুবর্ণ শামীম আলো
পররাষ্ট্র ক্যাডার
ডা: সুবর্ণ শামীম আলো, একজন মেধাবী চিকিত্সক যিনি লাখ লাখ বিসিএস’র প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে হলেন এবার ৩৬ তম বিসিএস -এ পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম। এই অদম্য নারী চিকিত্সক ২০০৪ সালে কুমিল্লা কলাগাছ এমইউ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ২০০৬ সালে ভর্তি হন ঢাকার ভিকারুননিসা নূন কলেজে। বাবা ফজলুল হক মোল্লা ও মা নাজমা বেগম এর মেধাবী মেয়ে সুবর্ণ শামীম আলো এইচএসসি’র পর ভর্তি হন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ৩৬ তম ব্যাচে। এমবিবিএস পাস করে তিনি এফসিপিএস-এর পড়াশোনা শুরু করেন ও ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে পেডিয়াট্রিক (শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ) বিষয়ে এফসিপিএস পার্ট ১ সম্পন্ন করেন। শুরু হয় মিটফোর্ট হাসপাতালে তার ছয় মাসের ট্রেনিং। কিন্তু স্বামীর অনুপ্রেরণাতেই তিনি বিসিএস-এর প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল কূটনৈতিক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার। পররাষ্ট্র ক্যাডার হওয়ার মাধ্যমে এই ইচ্ছা পূরণ হবে বলে আমি আশাবাদী। এর মাধ্যমে আমি আমার দেশকে বহিঃবিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করতে পারব।
উম্মে হাফসা নাদিয়া
প্রশাসন ক্যাডার
প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জিআরই, আইএলটিএস সম্পন্ন করে দেশের বাইরে পড়তে যাবেন। আর তিনিই এখন দেশ সেবার অনন্য সুযোগের অংশীদার। ৩৬তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন লক্ষ্মীপুরের মেয়ে উম্মে হাফসা নাদিয়া। শৈশবটা কেটেছে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর শহরেই। সেখানকার ত্রিধারা শিশু নিকেতনে প্লে থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর হলিক্রস কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক। আর সবশেষ ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বিসিএসে কেন এলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নাদিয়ার উত্তর, পরিবারে অনেক সরকারি কর্মকর্তা থাকলেও বিসিএস ক্যাডার ছিল না। বড় ভাই ব্যাংকার এ এইচ এম জাবের বিসিএস ভাইভা থেকে বাদ পড়ে যান। সে থেকে একটা আগ্রহ তো ছিলই, সঙ্গে তো মানুষের জন্য কাজ করবার ইচ্ছে আছেই। স্বামী ডা. রিয়াদ আরিফিন আক্ন্দ আর শ্বশুর বাড়ির পরিবারের অসম্ভব সহযোগিতায় বিসিএসে তার মনকাড়া সাফল্য বলে জানান উম্মে হাফসা নাদিয়া। তৃণমূল মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান উম্মে হাফসা নাদিয়া। কখনোই অহমিকা আর আমিত্ব নিয়ন্ত্রণ না করে সেটাই চাওয়া সৃষ্টিকর্তার কাছে। দেশ সেবার সুযোগ তো হাতের মুঠোয়, এবার শুধু সত্ থেকে সবার ভরসা হবার আকাঙ্খা নাদিয়ার।
নূরাঙ্গীর নাহিদ
পুলিশ ক্যাডার
পুলিশের পোশাকে নিজেকে দেখতে পাবেন শিগগিরই, এ ভাবনাই এখন শিহরণ নূরাঙ্গীর নাহিদের কাছে। পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সাধারণের সেবা করার সুযোগটা তো এখন একেবারে চোখের সামনেই। যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। হচ্ছিল ৩৬তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ নূরাঙ্গীর নাহিদের কথা। সংসার-সন্তান সামলে তিনি পূরণ করেছেন নিজের আর পরিবারের স্বপ্ন। নোয়াখালীর মেয়ে নূরাঙ্গীর নাহিদের পড়াশোনার একেবারে শুরুটা শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে মোহাম্মদুপর প্রিপারেটরি কলেজে। এরপর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগ থেকে শেষ করেছেন স্নাতক। বিসিএসের জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিতেন? এমন প্রশ্নে নাহিদের উত্তর, ঘরে বসেই শুরুর দিকে মডেল টেস্ট দিতাম, বিভিন্ন বই পড়তাম আর নিজেকে তৈরি করতাম। প্রিলিমিনারির আগে আমার বাসায় বসেই চলছিল প্রস্তুতি। প্রিলিমিনারিতে চান্স পাওয়ার পর মূলত কোচিংয়ে সময় দিয়েছি। কোচিংয়ের বাইরে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে গ্রুপ স্টাডি করতাম। ইচ্ছে তো পূরণ হলো এবার সেই ইচ্ছের ডালপালা মেলবার পালা। পুলিশিংয়ের কাজে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টাটা করতে চান আজীবন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চান প্রতিনিয়ত।
সাদিয়া আক্তার স্মৃতি
সাধারণ শিক্ষা
সবাই বলতো প্রথম বারে কারো বিসিএস হয় না। ওটা জাস্ট প্র্যাকটিস এর জন্যে দেওয়া। কথাগুলো ভাবিয়ে তুললো, আসলেই কি তাই। কোচিং করতে গিয়ে বিগত বছরের বিসিএস অভিজ্ঞ ভাইবোন বোনদের প্রস্তুতি অনেকটা ভাবিয়ে তুললো আমাকে। আমি নতুন ছিলাম আর সময় ছিল খুবই কম। রুটিন মাফিক প্রতিনিয়ত পড়া শুরু করলাম। যে বিষয়গুলো তুলনামূলক সহজ তা বেশি পড়তে লাগলাম যেন সেগুলো থেকে কিছু মিস না হয়। প্রিলিমিনারী পাস করলাম। মা-বাবা, বন্ধুরা সবাই অনেক বেশি উত্সাহ দেওয়া শুরু করল। নিজে ভাবতে লাগলাম আমাকে দিয়ে হয়ত সম্ভব। শুরু করলাম পুরো উদ্যমে লিখিত পরীক্ষার প্রিপারেশন নেওয়া। আমার ফ্যামিলি আমাকে পুরোপুরি সাপোর্ট দিয়েছিল। লিখিত পরীক্ষায় উভয় ক্যাটাগরিতে পাস করলাম। এরপর ভাইভা। স্বপ্ন পূরণের শেষ ধাপ। খুব বেশি পড়াশুনা নাই, পেপার আর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এবং সংবিধান দিয়ে প্রস্তুতি শেষ করলাম। ভাইভা দিলাম। শুরু হলো অপেক্ষা এবং নানান স্বপ্ন বোনা। আলহামদুলিল্লাহ্ আমি আমার প্রথম বিসিএস-এই শিক্ষা ক্যাডারে (পদার্থ বিজ্ঞান) সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছি।