যাত্রা পথে তাদের পরিচয়। পরিচয় থেকে শুরু হয় ভালবাসা তারপর বিয়ে। নিজের ধ’র্ম পরিচয় গো’পন করে বিয়ে, কয়েক বছর ঘর-সংসারের পর স্ত্রী’-সন্তান ফেলে পালিয়ে যাওয়ার অ’ভিযোগে রাজশাহীতে এক চিকিৎসকের বি’রুদ্ধে প্রতারণা ও নি’র্যাতনের মা’মলা হয়েছে।
রবিবার (১৯ জুলাই) রাজশাহী নারী ও শি’শু নি’র্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আ’দালতে বাদী হয়ে এ মা’মলা করেন ভুক্তভোগীর মা নগরীর শিরোইল মাস্টারপাড়ার হাফিজুর রহমানের স্ত্রী’ রেহানা বেগম। অ’ভিযু’ক্ত চিকিৎসকের নাম অর্জুন চন্দ্র চৌধুরী। তিনি সম্প্রতি এমবিবিএস পাশ করেছন।
অ’ভিযোগে বলা হয়েছে, বছর সাতেক আগে ডা. অর্জুন চন্দ্র চৌধুরী ধ’র্ম পরিচয় গো’পন করে প্রতারণার মাধ্যমে বাদীর মে’য়ে হামিদা খাতুন মৌমিতাকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় অর্জুন চৌধুরী নিজেকে মু’সলিম পরিচয় দিয়ে নকল জন্ম সনদ কাজীর দফতরে দাখিল করেন।
কয়েক বছর একই পরিচয়ে মৌমিতার সঙ্গে ঘর-সংসার করেন। তাদের ছয় বছরের একটি সন্তান রয়েছে। এর পর চলতি বছরের শুরুতে অর্জুন চৌধুরীর আসল পরিচয় জানাজানি হলে তিনি স্ত্রী’ ও সন্তান ফেলে পালিয়ে যান।
অ’ভিযোগ গ্রহণ করে রবিবার রাজশাহী নারী ও শি’শু নি’র্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক মো. মনসুর আলম মা’মলা’টি ত’দন্তের জন্য পু’লিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা রাজশাহী পিবিআইকে ত’দন্ত করে পরবর্তী ধার্য তারিখে আ’দালতে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
মা’মলায় ডা. অর্জুন চৌধুরী ছাড়াও তার ভাই নকুল চন্দ্র চৌধুরীকেও আ’সামি করা হয়েছে। আ’সামি অর্জুন চন্দ্র চৌধুরী ব্রাক্ষ্রণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়া মহল্লার নির্মল চন্দ্র চৌধুরীর ছে’লে। অর্জুন সম্প্রতি খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।
মা’মলার অ’ভিযোগে বলা হয়, ২০১৪ সালে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে রাজশাহী ফেরার সময় হাফিজুর রহমানের দশম শ্রেণি পড়ুয়া মে’য়ে হামিদা খাতুন মৌমিতার সঙ্গে পরিচয় হয়।
অর্জুন মৌমিতাকে নিজের নাম অ’ভি চৌধুরী বলে জানায়। ওই সময় মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ট্রেনযোগে রাজশাহী যাচ্ছিলেন অর্জুন। সেই পরিচয় সূত্রে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ হয়। পরিচয় থেকে গভীর প্রে’মে জড়ান দুই তরুণ-তরুণী। অর্জুন মেডিকেল কলেজে পরীক্ষার পর খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।
অ’ভিযোগ মতে, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি অর্জুন এমবিবিএস পাস করেন। এর পর থেকেই তিনি মৌমিতা ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। তাদের ছয় বছরের মে’য়েটির সঙ্গেও আর যোগাযোগ রাখেননি অর্জুন। মৌমিতা জানান, অর্জুন ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিলে বিষয়টি নিয়ে পরিবারে অসন্তোষ তৈরি হয়।
এই সময়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অর্জুন চন্দ্র চৌধুরী নামে একটি আইডির প্রোফাইলে তার স্বামী অ’ভি চৌধুরীর ছবি দেখতে পান। এ সময়ে অর্জুনের ধ’র্মপরিচয় নিয়ে তার স’ন্দেহ হয়। মৌমিতার এক ভাই খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজে গিয়ে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন যে, অ’ভি চৌধুরীর আসল নাম অর্জুন চন্দ্র চৌধুরী এবং তিনি মু’সলিম নন-সনাতন হিন্দু। এদিকে জরুরি বিষয় উল্লেখ করে অর্জুনকে রাজশাহীতে ডেকে পাঠান মৌমিতা।
২০২০ সালের ১ জানুয়ারি অর্জুন রাজশাহীতে শশুরবাড়িতে যান। মৌমিতা তার আসল পরিচয় প্রকাশের দাবি করেন। এ সময়েও অর্জুন নিজেকে মু’সলিম ও তার নাম অ’ভি চৌধুরী বলে দাবি করেন। স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে তুমুল হট্টগোলের পর মৌমিতা কয়েকবার আত্মহ’ত্যারও চেষ্টা করেন। এর পর থেকে অর্জুন কাউকে কিছু না বলে আত্মগো’পন করেন।
এরপর থেকে তার সঙ্গে মৌমিতা বা তার পরিবারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি অর্জুন। মৌমিতার মা রেহেনা বেগম বলেন, অর্জুন নিজের ধ’র্ম পরিচয় গো’পন করে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এখন তারা সামাজিকভাবে চরম বিড়ম্বনার মধ্যে দিন কা’টাচ্ছেন। পাশাপাশি তার মে’য়ে মৌমিতা ছয় বছরের সন্তানটিকে বুকে আঁকড়ে ধরে শুধু কা’ন্নাকাটি করছেন। এদিকে অর্জুন চৌধুরীর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী পিবিআইয়ের পু’লিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে–এটি একটি পরিক’ল্পিত প্রতারণা। বিষয়টি খুব স্প’র্শকাতর। মা’মলার নথি তাদের কাছে এখনও আসেনি। নথি হাতে পেলে আ’দালতের নির্দেশিত সময়ে প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।