বয়স বাড়ার স’ঙ্গে নারীর সন্তান ধারণক্ষ’মতা প্রাকৃতিকভাবেই খানিকটা কমে আসে। শুধু তা-ই নয়, জীবনযাপনের আরো কিছু বিষয় সন্তান ধারণক্ষ’মতাকে কমিয়ে দেয়। টেক্সাসের রিপ্রোডাকটিভ এনডোক্রিয়োনোলজিস্ট এবং ফারটিলিটি বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সিসকো অ্যারডোনডো বলেন, এ বিষয়গুলো না ঠিক করলে সন্তান ধারণ ক’ঠিনই হয়ে প’ড়ে। স্বা’স্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ ডটকমে রয়েছে এ বিষয়ক এক প্র’তিবেদন।
ওজনাধিক্য: অতিরি’ক্ত ওজন সন্তান না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। এটি শ’রীরের হরমোনের মাত্রাকে প্র’ভাবিত করে এবং নারীর সন্তান ধারণক্ষ’মতাকে অত্যন্ত জটিল করে তোলে। এর ফলে নারীর জরায়ুর কার্যক্ষ’মতাও হ্রাস পায়। ২০০৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, ১৮ বছর বয়সের যেসব নারী ওজনাধিক্যের স’মস্যায় রয়েছেন, তাঁরা জরায়ুর বিভিন্ন স’মস্যায় আক্রা’ন্ত হন এবং তাঁদের সন্তান জ’ন্মদানের ক্ষ’মতা কমে যায়।
রুগ্ন শ’রীর: অতিরি’ক্ত ওজন যেমন সন্তান ধারণক্ষ’মতা হ্রাস করে, তেমনি খুব বেশি পাতলা হওয়াও ক্ষ’তিকর। বেশি চিকন হলে নারীর দে’হে ল্যাপটিন হরমোনের অভাব হয়। এই হরমোন ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণ করে। শ’রীরে এই হরমোনের ঘাটতি হলে ঋতুচক্রের স’মস্যা হয়। তাই গবেষকদের মতে, উচ্চতা এবং ওজনের সামঞ্জস্য বজায় রাখু’ন। সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন ঠিক রাখু’ন। এটি নারীর ব’ন্ধ্যত্ব দূ’র ক’রতে সাহায্য করে।
বেশি বয়স: যখন নারীর ঋতুচক্র স্বা’ভাবিকভাবে ব’ন্ধ হয়ে যায়, তখন সে আর সন্তান ধারণ ক’রতে পারে না। ঋতুচক্র একবারে ব’ন্ধ হয়ে যাওয়াকে মেনোপজ বলে। তবে যদি মেনোপজে’র ঠিক আগের পর্যায়ে শ’রীরে ইসট্রোজেন বা প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায় বা একদমই নিঃসৃত না হয়, তখন তাকে পেরিমেনোপজ বলা হয়। মেনোপজ হয় সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে।
৪৫ বছরের আগেই পেরিমেনোপজ হতে পারে। তাই অধিকাংশ চিকি’ৎসকের মতে, ৩৫ বছরের আগে সন্তান নেওয়া উচিত। এর পরে সন্তান ধারণক্ষ’মতা ক’ঠিন হয়ে প’ড়ে।
বংশগত কারণ: যদি আপনার মায়ের মেনোপজ আগে হয়, তবে আপনারও আগে থেকেই মেনোপোজ হওয়ার আশ’ঙ্কা থাকে। নারীরা জ’ন্মায় কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে এবং এই জিনিসটি বেশি হওয়া বা কম হওয়ার পেছনে জিনগত কারণও কাজ করে। এ রকম অনেক কিছুই নির্ভর করে বংশগত কারণে। গবেষকদের মতে, যদি পরিবারে দেরিতে সন্তান ধারণের ইতিহাস থাকে, তবে আপনারও দেরিতে সন্তান হতে পারে।
বিভিন্ন ধ’রনের রাসায়নিক: গবেষণায় বলা হয়, দূষণ ও ক্ষ’তিকারক রাসায়নিক পদার্থ (যেগুলো শিল্পকারখানা থেকে উৎপন্ন হয়) ২৯ শতাংশ দম্পতির ব্ন্ধ্যত্বের জন্য দায়ী। গবেষকরা বলেন, ১৫টি কেমিক্যাল রয়েছে, যা আগেই মেনোপোজ হওয়ার জন্য দায়ী। এসব কেমিক্যালের মধ্যে রয়েছে নাইনপিসিবিএস (১৯৭৯ সালে ব’ন্ধ ঘো’ষণা করা হয়েছিল, তবে এখনো কিছু পুরোনো জিনিসের মধ্যে এগুলো পাওয়া যায়) তিন ধ’রনের কীটনাশক, প্যাথালেটস (যা বিভিন্ন ধ’রনের প্রসাধনীতে রয়েছে) এবং টক্সিন। এসব ব’ন্ধ্যত্বের জন্য বহুলাংশে দায়ী।
ধূমপান: ধূমপানের কারণে ভ্রূণ তৈরি ব্যা’হত হয়, যা গর্ভধারণের প্রাথমিক অবস্থাকে ক্ষ’তিগ্রস্ত করে। গবেষণায় বলা হয়, ১৩ শতাংশ ব’ন্ধ্যত্বের জন্য দায়ী ধূমপান। ধূমপান নারী-পুরুষ উভ’য়ের হরমোনকে ক্ষ’তিগ্রস্ত করে। যেসব নারী কম পরিমাণ ধূমপানও করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এ স’মস্যা হতে পারে।
মদ্যপান: মদ্যপানে অভ্যস্ত নারীদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁ’কি থাকে অনেক। ২০০৪ সালে সুইডিশ বিজ্ঞানীরা ১৮ বছর ধ’রে মদ্যপান করেন—এমন সাত হাজার নারীর ওপর গবেষণা করে দেখেন, তাঁদের সন্তান ধারণক্ষ’মতা অনেক কমে গেছে। তাই গবেষকদের প’রামর্শ, যদি আপনি সন্তান নিতে চান, তবে অবশ্যই মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
বেশি ব্যায়াম: ব্যায়াম করা আপনার শ’রীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং শ’ক্তি দেয়। যখন আপনি সন্তান নিতে চাইবেন, এটি খুব জ’রুরি। তবে আপনি যদি অতিরি’ক্ত ব্যায়াম করেন, এটি নেতিবাচক প্র’ভাব ফেলতে পারে। যাঁরা দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি ব্যায়াম করেন, তাঁদের এ আশ’ঙ্কা থাকে।
থাইরয়েড স’মস্যা: থাইরয়েড স’মস্যা গর্ভধারণকে ব্যা’হত করে। থাইরয়েড হলো এমন একটি গ্রন্থি, যা ঘাড়ের সামনের দিকে নিচের অংশে থাকে। এই থাইরয়েড থেকে অনেক হরমোন নিঃসৃত হয়। থাইরয়েডজনিত কোনো স’মস্যা হলেও সন্তান ধারণক্ষ’মতা কমে যেতে পারে।
ক্যাফেইন: আপনি যদি প্রচুর পরিমাণ ক্যাফেইন জাতীয় জিনিস খান, এটি আপনার গর্ভধারণকে ক্ষ’তিগ্রস্ত ক’রতে পারে। গবেষণায় বলা হয়, যাঁরা দিনে পাঁচ কাপের বেশি কফি পান করেন, তাঁদের এ স’মস্যা হয়। তাই সন্তান নিতে চাইলে কফিপান কমিয়ে দেওয়ার পক্ষেই মতামত গবেষকদের।
স্বা’স্থ্যগত স’মস্যা: বিভিন্ন স্বা’স্থ্যগত স’মস্যার ফলে ব’ন্ধ্যত্ব হতে পারে। পলিসাইটিক ওভারি সিনড্রোম, সিস্ট, এনডোমিটট্রিওসিস—এসব বিষয় অনেক সময় নারীর ব’ন্ধ্যত্বের জন্য দায়ী। এ ছাড়া রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস অনেক সময় এর কারণ হয়। তাই এসব স’মস্যা হলে আগে থেকে চিকিৎ’সা করাতে হবে, নয়তো সন্তান ধারণ ক’রতে স’মস্যা হতে পারে।
মা’নসিক চা’প: গবেষণায় বলা হয়, যেসব নারী দীর্ঘদিন ধ’রে মা’নসিক চা’প বা দু’শ্চিন্তার মধ্যে থাকেন, তাঁদের সন্তান ধারণক্ষ’মতা অনেক কমে যায়। কারণ, চা’প শ’রীরের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটায়। তবে চা’পই এর একমাত্র কারণ নয়। গবেষকদের প’রামর্শ, যেসব নারী সন্তান নিতে চাইছেন, তাঁদের চা’প নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি শেখা খুব জ’রুরি।