বিয়ের দাবিতে প্রেমিকা ১০দিনের অনশনে, প্রেমিকের আত্মহত্যা

ফেসবুকে পরিচয়! তারপর প্রেম। এভাবে কেটে গেছে প্রায় ২বছর। হঠাৎ করেই প্রেমিকের বিয়ের সংবাদে নড়েচড়ে বসেন প্রেমিকা। কতিপয় মাতাব্বরদের আশ্বাসে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করেন গত ১০দিন। প্রেমিকার বলয়ে থাকা মাতাব্বরদের চাপের মুখে কর্মস্থলের ৪তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে বেচারা প্রেমিক।

গতকাল রবিবার সকালে মনপুরা সরকারি ভবনের পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মনপুরা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফজলুল হক। আর বিকাশের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বাড়ির লোকজন ওই কলেজ ছাত্রীকে বাড়িতে আটক করে রাখেন।

জানা গেছে, ধামরাই উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়নের বেরশ এলাকার রামানন্দ সরকারের বড় ছেলে দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ে কর্মরত বিকাশ সরকারের সাথে একই উপজেলার চৌটাইল মহিলা ইডেন কলেজ এর অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী বিজয়া বিশ্বাসের পরিচয় ঘটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে(ফেসবুক)। এরপর থেকে তাদের প্রেমের স্বরলিপি শুরু হয়।

তাদের প্রেমের বয়স প্রায় ২ বছর। চাকুরী পেয়ে বিয়ের জন্য তারাহুরা করছিল ছেলের পরিবার। এক পর্যায়ে প্রেমিকা বিজয়াকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় বিকাশ সরকার ও তার পরিবার, বিয়েতে পণ প্রথায় মিল না হওয়ায় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিজয়া বিশ্বাস ও তার পরিবার। পরবর্তীতে ছেলেকে অন্যত্র বিয়ে ঠিক করে বিকাশের পরিবার।

গত ১৭আগষ্ট রাতে বিজয়া বিশ্বাস বেরশ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম নুরু ও তার অনুসারীদের কথামতো বিকাশ সরকারের বাড়িতে চলে আসেন এবং বিয়ের দাবিতে গত ১০দিন যাবৎ অনশন করে।

এসময় বিকাশ সরকারের বাবা-মাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ঘরে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে যায় এমনকি বিকাশ সরকারও বাড়িতে ছিল না। এসুযোগে বিজয়া বিশ্বাস স্থানীয় মাতাব্বরদের সহায়তায় ঘরের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে।

পরবর্তীতে স্থানীয় মাতাব্বর সাবেক ইউপি সদস্য নুরু মিয়াসহ অন্যান্যদের চাপে পুনরায় বিকাশ এর পরিবার বাড়িতে চলে আসে।

এ বিষয়ে বিকাশ এর বাবা জানায়, মেয়েটি গত ৮/৯ দিন যাবৎ আমাদের বাড়িতে এসে উঠেছে। স্থানীয় মাতাব্বরদের চাপে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছি। মাতাব্বররা সাদা স্ট্যাম্পে টিপ সইও নিল, এরপরও আমার ছেলেকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছে তারা এজন্যই লজ্জা ও ভয়ে সে আত্মহত্যা করছে। আমি সকলের বিচার চাই।

বিজয়া বিশ্বাস জানায়, স্থানীয় মাতাব্বর নুরু কাকাসহ অন্যান্যদের সাথে কথা বলে তাদের কথামতো বিয়ের দাবিতে এ বাড়িতে এসে উঠেছি। তারা আমাকে বলেছিল এই বাড়িতে আসলেই পারিবারিকভাবে তারা বিয়ের ব্যাবস্থা করে দিবে। এমনটি হবে জানলে আসতাম না।

স্থানীয়রা জানায়, বিকাশ ভোলা জেলায় সরকারী চাকুরী করে। সেখানেই থাকে এই মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল তখন মেয়ে পক্ষ রাজি হয়নি তাই সকলের মতামতে অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। অন্যত্র আশীর্বাদ করা হয়ে গেছে। এমন সময় এই মেয়ে কার ইন্দনে এই বাড়িতে আসলো বুঝতেই পারলাম না।

স্থানীয়রা আরো জানায়, মাতাব্বররা এক রকম জোড় জবরদস্তি করে সাদা স্ট্যাম্পে সই নিয়েছে। এছাড়ও অনেক ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে ছেলের বাবাকে রাজি করিয়েছে বিয়ের জন্য অথচ হিন্দু ধর্ম মতে বিকাশের বিয়ের আশীর্বাদ হয়ে গিয়েছে আগেই। এটা ধর্মের সাথে বারাবাড়ি করেছে মাতাব্বররা। বিকাশের মোবাইলে অনেকেই ফোন করে হুমকি দিয়েছে। এজন্যই লজ্জা ও ভয়ে বিকাশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।

বর্তমান ইউপি সদস্য জানায়, হিন্দু পরিবারের প্রতি এরকম বারাবাড়ি না করলেও পারতো। অনেকে অতি উৎসাহিত হয়ে ছেলেটার জীবন শেষ করে দিলো। মেয়েকে আইনের কাছে সুপর্দ করা হয়েছে। আইনগতভাবে যা হবে তাই করবো।

পুলিশ জানায়, গ্রাম পুলিশের সহায়তায় এলাকার লোকজন বিজয়া বিশ্বাস নামের একটি মেয়েকে থানায় সুপর্দ করেছে। এ বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।

Leave a Comment