নাগরিক কায়ক্লেশ থেকে মুক্তি খুঁজে পেতে ২৩ আগস্ট শুক্রবার ৪৩ জন গৃহত্যাগীকে সাথে নিয়ে গৃহত্যাগীরা গিয়েছিলো মুন্সিগঞ্জে এক ঢিলে চার পাখি মারতে। এবার আমরা ঘুরে দেখেছি মুন্সিগঞ্জের ঢেউহীন রাজ্যের আড়িয়াল বিল। এটি দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বিল। সুনীল আকাশ, টলটলে বিলের জল। কখনোবা বিলের মাঝে একখণ্ড দ্বীপ।
কিশোর-কিশোরীদের নৌকায় চড়ে মাছ ধরা, শাপলা তোলা দেখে কেটে গেছে আমাদের বেলা টুকু। দিনের আলো ফুটে ওঠায় শাপলারা অনেকটাই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। চারপাশ টইটম্বুর পানিতে বিলে ভিটার উপর ঘরগুলো মাথা তুলে আছে। এই ঘরে যাদের বসত তাদের জীবন বড়ই বৈচিত্র্যময়। বিলের যত গভীরে আমরা যেতে থাকি বিলে সৌন্দর্য যেন ততই ঠিকরে বের হতে থাকে।
আড়িয়াল বিলের সৌন্দর্য শেষ করে আমরা গিয়েছিলাম গাছের প্রাণ আছে প্রবক্তা বাংলার কৃতি সন্তান জে.সি.বসুর আদি বাড়ী।
স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর বাড়িটি ৬ কক্ষবিশিষ্ট। বাড়িটির একটি কক্ষকে জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে। এই বাড়িতে ৬টি দিঘী রয়েছে। দিঘির বাধানো ঘাটে বসলে আপনার মন হারিয়ে যাবে বাংলার অতীত রূপকথায় । তার পৈতৃক বাড়িটির ত্রিশ একর জায়গায় জগদীশ চন্দ্র বসু কলেজ ও কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু তার জীবিত অবস্থায় তিনি তার সম্পত্তি দান করে যান।
বিলের ধারেই ভাগ্যকূলের বালাশুর গ্রামে গড়ে ওঠা যদুনাথ রায় বাহাদুরের জমিদার বাড়ি। ভাষা বিজ্ঞানী ড. হুমায়ূন আজাদ তার লেখা এক প্রবন্ধে এ বাড়িটিকে প্যারিস শহরের সাথে তুলনা করে লিখেছেন, বিলের ধারে প্যারিস শহর। জমিদার যদুনাথ রায়ের এ বাড়িটির স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর।
এগুলা ঘুরা শেষ করে আমরা তাজা ইলিশ আর গরম ভাতের স্বাদ নিতে আমরা ছুটে গিয়েছিলাম মাওয়া ঘাটে। পেটপুরে খাওয়া শেষ করে পদ্মা নদীতে সূর্যের আলোর খেলা দেখে ঘিরে আসে সন্ধ্যা।
এবার ফিরতে হবে বাড়ির পথে। গৃহত্যাগীর প্রতি টা মানুষ জানে গৃহত্যাগীর প্রত্যেকটা মানুষ বলতে পারবে গৃহত্যাগী দের সাথে কাটানো একটা মূহুর্ত কতোটা গভীর কতোটা মসৃন। অকৃত্রিম ভালোবাসা রইলো প্রত্যেকটা গৃহত্যাগীদের জন্য ❤
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকার গুলিস্তান থেকে মাওয়া গামী যেকোন বাসে (ইলিশ) মিরপুর থেকে স্বাধীন, আব্দুল্লাহপুর থেকে প্রচেষ্টায় করে ছনবাড়ি (শ্রীনগর নামব বললে এখানেই নামাবে) নেমে রাস্তা ক্রস করে ইজি বাইকে জনপ্রতি ৫ টাকা কিংবা রিক্সায় ১০ টাকা দুইজন করে শ্রীনগর বাজার। বাজারে নৌকা ঘাট আছে, হাতে টানা কিংবা ইঞ্জিনচালিত দুই রকম নৌকাই পাবেন। চাইলে গদিঘাট গিয়েও নৌকা ভাড়া করতে পারেন, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ৮০০-১০০০ এ সারা দিনের জন্য ভাড়া করতে পারবেন। অথবা ঢাকার গুলিস্থান থেকে মাওয়াগামী বাসে ৬০ টাকার টিকেট কেটে উঠে পড়বেন। সেখান থেকে শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ডে নেমে পড়বেন। ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে গাঁদিরঘাটগামী অটোস্ট্যান্ডে চলে যান। অটোটে গাঁদিঘাট অর্থাৎ আড়িয়াল বিলের কাছে নামিয়ে দেবে। এরপর ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করে ঘুরুন। নৌকায় ঘণ্টা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা নেবে।
কোথায় থাকবেনঃ
ঢাকা থেকে দিনে দিনে মুন্সিগঞ্জ ভ্রমণ শেষ করে ফিরে আসা সম্ভব। তাছাড়া জেলা শহরে থাকার সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে।
হোটেল থ্রি স্টার (০১৭১৫৬৬৫৮২৯, ০১৭১৫১৭৭৭১৬) এসব হোটেল ১৫০-৬০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।
কি খাবেনঃ
শ্রীনগর বাজারে অবস্থিত মায়ের দোয়া হোটেলে খেতে পারেন পদ্মার ইলিশ দিয়ে। খরচ পরবে ১৩৫-১৪৫ টাকা। অথবা মাওয়া ঘাটে গিয়েও খেতে পারেন। চিত্তর দই, আনন্দর মিষ্টি, খুদের বৌউয়া বা খুদের খিচুড়ি, ভাগ্যকুলের মিষ্টি ও ঘোল খেতে পারেন।
ঘুরতে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না। মনে রাখবেন, আপনার একটু সচেতনতাই পারে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে।
আপনারা চাইলে গৃহত্যাগী’র ট্র্যাভেল গ্রুপের সাথে বাংলাদেশ আনাচে কানাচে ভ্রমণ দিতে পারেন।
গৃহত্যাগীর ফেসবুক গ্রুপঃ https://www.facebook.com/groups/Grihotagi/