নন-ক্যাডারে প্রাথমিকে নিয়োগ পাবেন ১১২২ প্রধান শিক্ষক

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১২২ জন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগ পরীক্ষা হবে পিএসসির মাধ্যমে। নন-ক্যাডারে স্থায়ী এই পদটি ১১ ও ১২তম গ্রেডের। আবেদন করতে হবে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের মধ্যে। নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি, বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি ও আবেদন প্রক্রিয়ার দরকারি তথ্য জানাচ্ছেন সাজিদ মাহমুদ

পরীক্ষা যেভাবে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষা হবে মোট ১০০ নম্বরে। প্রার্থী নির্বাচনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রথমেই নেওয়া হবে এমসিকিউ পদ্ধতির লিখিত পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় সময় দেওয়া হবে ৯০ মিনিট বা দেড় ঘণ্টা।

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও দৈনন্দিন বিজ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) বিষয়ে মূলত প্রশ্ন করা হবে। বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার নম্বর বণ্টন বা প্রশ্ন থাকবে বাংলায় ২৫, ইংরেজি ২৫ , গণিত ও দৈনন্দিন বিজ্ঞানে ২০ নম্বর এবং সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) বিষয়ে ২০ নম্বর। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫ অনুসারে লিখিত পরীক্ষায় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।
মৌখিক পরীক্ষায়ও প্রার্থীকে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য মূলত প্রার্থীদের দুই ধরনের পরীক্ষায়ই উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রস্তুতির শুরুতেই পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস ও নম্বর বণ্টন দেখে নিন। দরকারি তথ্য পাওয়া যাবে কমিশনের ওয়েবসাইট ও প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে।

নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি

লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন হবে মূলত বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও দৈনন্দিন বিজ্ঞান এবং সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক) বিষয়ে। পরীক্ষা নেবে পিএসসি। তাই প্রশ্নপত্রের ধরনও পিএসসির মান অনুযায়ী হবে। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিগত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, একই গ্রেডের পিএসসির নেওয়া বিভিন্ন পদের নিয়োগ প্রশ্নপত্র অনুশীলন করতে হবে।

প্রশ্নের ধরন ও মান সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। প্রস্তুতিফমূলক সহায়ক বই সংগ্রহ করতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন প্রকাশনীর সহায়ক বই পাওয়া যায়। সহজে ও কম সময়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সহায়ক বই বেশ কাজের। বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির জন্য অষ্টম শ্রেণির গণিত, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত পাঠ্যবইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো পড়বেন।
বাংলা : রচনা, সারাংশ, পত্রলিখন, বঙ্গানুবাদ এবং রচনামূলক ও এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য বাংলা ব্যাকরণের ভাষা, ধ্বনিতত্ত্ব, বাক্য প্রকরণ, সমাস, উপসর্গ, অনুসর্গ, ধাত,ু বচন, পদ প্রকরণ, কারক, সন্ধিবিচ্ছেদ, এককথায় প্রকাশ, বাগধারা, ক্রিয়া-বিভক্তি, উক্তি, শব্দ, যুক্তবর্ণ, প্রত্যয়, প্রবাদ-প্রবচনে বেশি জোর দিতে হবে। এ বিষয়ে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে বেশি জোর দেবেন।

ইংরেজি : Essay, Letter, Comprehension-এর পাশাপাশি Use of Verbs, Prepositions, Voice, Narration, Correction of errors in composition, Use of words having similar pronunciation but conveying different meaning, Use of Idioms and Phrases ভালোভাবে পড়তে হবে। প্রস্তুতি নেবেন নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি বই থেকে।

গণিত : পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি ও মানসিক দক্ষতার ওপর প্রশ্ন করা হয়। পাটিগণিতের সেট ও সংখ্যা, সরল, গড়, লাভ-ক্ষতি, শতকরা, সুদকষা, অনুপাত ও সমানুপাত অধ্যায়গুলো অনুশীলন করতে হবে। বীজগণিতের বর্গ ও ঘন এর সূত্র এবং ব্যবহার, লসাগু, গসাগু, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, সমাধান, মান নির্ণয় ইত্যাদি অধ্যায়ে ওপর ভালো দখল থাকতে হবে। জ্যামিতির প্রাথমিক ধারণা ও সংজ্ঞা, রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ এবং ত্রিকোণমিতি অধ্যায়গুলোর বেসিক যেন আয়ত্তে থাকে। অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি বিষয়েও যথাযথ প্রস্তুতি থাকতে হবে। এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোর মধ্যে আছে—Ability to understand language, Decision making ability, Ability to measure spatial relationship and direction, Problem solving ability, Perceptual ability।

সাধারণ জ্ঞান : সাম্প্রতিক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-সংবাদসহ আন্তর্জাতিক বিষয়, যেমন—রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ, বিশ্ববাণিজ্য, সামগ্রিক বিজ্ঞান, অর্থনীতি, কম্পিউটার, ইতিহাস, বিশ্বসংস্কৃতির ওপর জোর প্রস্তুতি রাখতে হবে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘটনাবলি, ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ নানা বিষয়ে বিশদ জানাশোনা থাকতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে দৈনন্দিন বিজ্ঞান, মাটি, পানি, তাপ, বিদ্যুৎ, আলো, চুম্বক, খাদ্যের উপাদান, জনস্বাস্থ্য, দূষণ ও কম্পিউটার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।


আবেদনের যোগ্যতা

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন প্রার্থীদের ১১তম ও ১২তম গ্রেডে স্থায়ী পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। ‘বেতন গ্রেড’ দুটি হলেও শিক্ষাগত যোগ্যতা একই চাওয়া হয়েছে। প্রার্থীকে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক (ডিগ্রি) বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের পাস হতে হবে। শিক্ষাজীবনের কোনো স্তরের পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ বা সমমানের জিপিএ/শ্রেণি/সিজিপিএ গ্রহণযোগ্য হবে না। ১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে প্রার্থীর বয়স হতে হবে অনূর্ধ্ব ৩২ বছর। সব জেলার যোগ্য প্রার্থীরা আবেদনের সুযোগ পাবেন।

আবেদন প্রক্রিয়া

আবেদন ফরম পূরণ ও ফি জমা দিতে হবে

http://bpsc.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ দুপুর ১২টায়। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণের শেষ সময় ২০ অক্টোবর ২০২৫ সন্ধ্যা ৬টা। এই সময়ের মধ্যে ইউজার আইডিপ্রাপ্ত প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন জমার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষার ফি জমা দিতে পারবেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যাবে এই ওয়েবসাইটে : http://bpsc.gov.bd

বেতন-ভাতা

নিয়োগপ্রাপ্তরা ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে বেতন পাবেন। ১২তম গ্রেডে (প্রশিক্ষণবিহীন) বেতন স্কেল ১১,৩০০-২৭,৩০০ টাকা এবং ১১তম গ্রেডে (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ১২,৫০০-৩০,২৩০ টাকা। নিয়োগপ্রাপ্তরা সরকারি অন্যান্য আর্থিক সুবিধা এবং অবসরকালীন পেনশন পাবেন।

লিখিত পরীক্ষায় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে। মৌখিক পরীক্ষায়ও ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে
সব মিলিয়ে নন-ক্যাডারে ২৭৬১ পদ

নন-ক্যাডারে প্রাথমিকে নিয়োগ পাবেন ১১২২ প্রধান শিক্ষকনন-ক্যাডারে বড় ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। সবচেয়ে বেশি জনবল নেওয়া হবে প্রধান শিক্ষক (১১২২) ও সিনিয়র স্টাফ নার্স (৮২৮) পদে। এ ছাড়া আরো ৩০ ধরনের পদে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের জন্য আরো ৮১১ জন নেওয়া হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ পাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজগুলোতে। পদগুলো হলো—সহকারী প্রগ্রামার ১৭, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/জেনারেল ইলেকট্রনিক্স) ৯০, জুনিয়র ইস্ট্রাক্টর (টেক/ফার্ম মেশিনারি) ১৫৩, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং) ৮৯, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন) ৬০, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/সিভিল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড সেফটি) ২০, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/ফিশ কালচার অ্যান্ড ব্রিডিং) ৩৮, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং) ৪০, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/মেশিন অপারেশন অ্যান্ড বেসিকস) ৯৯, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/কম্পিউটার) ৮১, জুনিয়র ইস্ট্রাক্টর (টেক/প্লাম্বিং অ্যান্ড পাইপ ফিটিং) ৬৪, সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ১৪ জন। এ ছাড়া চিত্রগ্রাহক ৬, সহকারী সচিব (লেজিসলেটিভ অনুবাদ) ৭, সহকারী রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী ৩, সহকারী পরিচালক (প্রেস) ১, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ১, ইনস্ট্রাক্টর (টেক/ইনস্ট্রুমেন্টেশন অ্যান্ড প্রসেস কন্ট্রোল) ১, ওয়ার্কশপ সুপার (ইলেকট্রনিকস) ২, ওয়ার্কশপ সুপার (আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইনটেরিয়র ডিজাইন) ১, শিল্প নির্দেশক/গ্রাফিক শিল্প নির্দেশক/দৃশ্যপটকার ২, সহকারী পরিচালক (দৃশ্যসজ্জা ও রেখায়ন প্রশিক্ষণ) ১, সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর ১, ডাটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল সুপারভাইজার ২, ফটো টেকনিশিয়ান ৩, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/ডাটা টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং) ৩, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি) ৫, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/কেমিক্যাল) ১, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক/আর্কিটেকচার) ৫ ও জনসংযোগ কর্মকর্তা ১ জন।